ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা ইনকাম করার ৫ টি সেরা ওয়েবসাইট

ফ্রিল্যান্সিং কথাটার সাথে বাংলাদেশের ৯০% লোক বর্তমানে পরিচিত। প্রায় ৬ লক্ষ ৫০ হাজার ফ্রিল্যান্সার আছে বাংলাদেশে। এবং প্রতিদিন এই সংখ্যাটা বাড়ছে। যে সকল ওয়েবসাইট থেকে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সার টাকা ইনকাম করে তার একটি ধারনা দেওয়ার চেষ্ট করব।

১. ফাইভার ( Fiverr )

বর্তমান সময়ের সব থেকে জনপ্রিয় একটি ওয়েবসাইট। এই ওয়েবসাইটি প্রতিষ্টিত হয় ২০১০। এটা ইসরাইলের একটি কোম্পানি। যে সকল কাজ অনলাইনে আদান-প্রদান করা যায় তার প্রতিটি বিষয় ফাইভারে যুক্ত আছে।

ফাইভারে ওয়েবসাইটে ফ্রিল্যান্সার যে সকল কাজ করে অর্থ আয় করতে পারে।

প্রায় কয়েকশ প্রকারের কাজ আছে ফাইভারে। আপনি যে বিষয় পারদর্শী সেই বিষয়ে ফাইভারে গিগ তৈরি করতে হয়ে। গিগ হল কাজের বর্ননা। ধরুন, আপনি খুব ভালো ভয়েস ওভার দিতে পারেন। আপনি তার উপর একটি গিগ তৈরি করলেন। যেমন,

গিগের টাইটেল হলঃ আমি বাংলায় আপনার ভিডিও ভয়েস ওভার করে দিবো।

কত সময় ভয়েস দিবেন এবং তার জন্য কত টাকা নিবেন? কত দিন থেকে ভয়েস দিচ্ছেন, ইত্যাদি বিষয় গুলো গিগের মধ্যে বিস্তারিত থাকবে। নিচের একটি গিগের উদাহরন দেওয়া হল।

Fiverr Voice Recorder Worker Profile

আপনি আপনার দক্ষতা অনুযায়ি গিগ ওপেন করবেন। কোন বায়ারের আপনার প্রোফাইল ভালো লাগলে আপনার সাথে যোগাযোগ করবে এবং আপনাকে কাজের অর্ডার দিবে। কাজ শেষ করে জমা দিবেন, বায়ার কাজ ঠিক আছে ফাইভার কে জানালে আপনার একাউন্টে পেমেন্ট জমা হবে।

Join Fiverr: Fiverr

২. আপওয়ার্ক ( Upwork )

আপওয়ার্ক প্রথমে ওডেক্স নামে পরিচিত ছিল। ২০০৩ সালে ওডেক্স প্রতিষ্টিত করে অডিসিয়াস সাতালস। পরর্বতীতে ২০১৫ সালে ওডেক্স নাম পরির্বন করে হয় আপওয়ার্ক। বর্তমানে আপওয়ার্ক প্রাইভেট মার্কিন প্রতিষ্টান।

আপওয়ার্কে প্রোফাইল ওপেন করে প্রুব পাওয়ার পর বিড করে কাজ নিতে হয়। একটা উদাহরন দেওয়া যাক, আমি একটি ই-বুক লিখতে চাচ্ছি কি ভাবে অনলাইন থেকে অর্থ ইনকাম করা যায়।

upwork website images

আমি আমার কাজটি আপওয়ার্কে একজন বায়ার হয়ে কাজটি সাবমিট করলাম। এবং আমি একটি নিদিষ্ট রেট ধরে দিলাম। যেমন, প্রতি ঘন্টা কাজ করার জন্য ১৫ ডলার দিব এবং সপ্তাহে ৩০ বা ৪০ ঘন্টা কাজ করাবো।

আপনি ফ্রিল্যান্সার এবং আপনি ই-বুক লিখতে পারেন। আপনি আমার কাজটির জন্য বিড করলেন ঘন্টায় ২০ ডলার। এবং আপনি কিভাবে আমার কাজটি করবেন তার বিস্তারিত বর্ননা দিলেন।

আমার যদি মনে হয় আপনাকে কাজটি দেওয়া দরকার তাহলে আমি আপনার সাথে যোগাযোগ করব এবং কাজটি আপনাকে দিবো।

আমি যে কাজটি পোষ্ট করেছি সেখানে আরও অনেক ফ্রিল্যান্সার কাজটি পাওয়ার জন্য বিড করবে। এদের মধ্যে থেকে যাকে আমার ভালো মনে হবে আমি তাকে কাজটি দিবো।

আপওয়ার্কে হাজার হাজার কাজের ক্যাটাগরি আছে।

Join Upwork as a Worker: Upwork

৩. পিকোওয়ার্কাস ( Picoworkers )

মাইক্রো কাজের জন্য এই ওয়েবসাইটি খুবেই ভালো। মাইক্রো কাজ বলতে ছোট ছোট কাজ যেমন, ভিডিও রিভিও, ফেসবুক লাইক, কমেন্ট, ব্লগ ভিজিট, সাইন-আপ, সার্ভে ইত্যাদি।

Picoworkers Website

এখানে যে কেউ জয়েন করে কাজ করতে পারবে। প্রতিদিন গড়ে ১ থেকে ২ ডলারের কাজ করা সম্ভব। এতো কম আয়ের কারন হল ছোট কাজ। যত ছোট কাজ তত কম পেমেন্ট।

সাইন-আপ করে প্রোফাইলের সকল তথ্য সঠিক ভাবে দিয়ে কাজ করতে পারবেন। পিকোওয়ার্কাসে ভুল কাজ জমা দিলে আপনার প্রোফাইলে কাজ আসবে না। আপনার প্রোফাইল পারসেন্ট সব সময় 95% এর উপরে রাখেতে হবে।

এই ওয়েবসাইটে কাজ করে টাকা আয় করার সুবিধা

  • ছোট ছোট কাজ সহজে করা যায়।
  • কাজ করতে তেমন কোন অভিজ্ঞতার দরকার হয় না।
  • মিনিমাম পেমেন্ট ৫ ডলার।
  • আপনার পেমেন্ট বিকাশের মাধ্যমে নিতে পারবেন।

Join Picoworkers Website: Picoworkers

৪. পিপল পার আওয়ার ( PeoplePerHour )

প্রগ্রামার, সাংবাদিকতা, ব্রান্ডিং অনন্য মার্কেটিং কাজের জন্য পিপল পার আওয়ার উন্নত মানের ওয়েবসাইট। পিপল পার আওয়ার প্রতিষ্টিত হয় ২০০৭ সালে।

আপনি পিপল পার আওয়ারে ফ্রি অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট করতে পারবেন। কিন্তু আপনার ওপেন করা একাউন্টিটি ওয়েবসাইটের মডারেটর দ্বারা রিভিউ হবে। সব কিছু ঠিক থাকলে আপনার একাউন্টটি একটিভ হবে।

Peopleperhour Website

একটিভ হওয়া একাউন্ট থেকে আপনি বায়ারদের কাজে গুলোতে দরখাস্ত করতে পারবেন। এবং আপনি আপনার মত করে প্রাইস নির্ধারন করতে পারবেন।

আপনি কোন কাজে এপ্লাই করার পর বায়ার যদি আপনার প্রোফাইল বা অভিজ্ঞতা অনুযায়ি আপনাকে কাজ দিবে। আবার বায়ার আপনাকে কাজ নাও দিতে পারে।

আপনি প্রতিটি কাজ থেকে যে টাকা আয় করবেন তার ২০% পিপল পার আওয়ার ওয়েবসাইট রেখে দিবে। বাকি অর্থ আপনার একাউন্টে যুক্ত হবে।

প্রতি মাসে আপনি ১৫ টি কাজে দরখাস্ত করতে পারবেন। আপনি বেশি কাজের জন্য এপ্লাই করতে চাইলে ক্রেডিট ক্রয় করতে হবে।

Create Account: PeoplePerHour

৫. ৯৯ডিজাইন ( 99Designs )

99designs Website

ওয়েবসাইটে কাজের ধরনঃ ওয়েব পেজ ডিজাইন , লোগো ডিজাইন এবং গ্রাফিক্স ডিজাইন।

সুবিধাঃ কাজ করার মত সুন্দর পরিবেশ, সুরক্ষিত পেমেন্ট সিস্টেম।

অসুবিধাঃ অনেক বেশি সার্ভিস ফি, ডিজাইনারের দক্ষতা একটি নিদিষ্ট গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।

৯৯ডিজাইন ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনাকে একাউন্ট ক্রিয়েট করতে হবে। এবং আপনি আপনার অভিজ্ঞতা অনুযায়ি প্রোফাইল সাজাবেন। সব কিছু ওকে হয়ে গেলে ৯৯ডিজাইন ওয়েবসাইট টিম আপনার প্রোফাইল রিভিউ করবে। আপনার প্রোফাইল দেখার পর ৯৯ডিজাইন সিদ্ধান্ত নিবেন যে আপনাকে সিলেক্ট করা হবে কি না।

আপনি আপনার দক্ষতা অনুযায়ি কাজের ধরন, ক্যাটাগরি সিলেক্ট করে জব সার্চ করতে পারবেন। আপনার পছন্দকৃত জবের জন্য এপ্লাই করতে হবে।

যখনই আপনি একটি নতুন ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করবেন, 99designs $100 থেকে একটি প্ল্যাটফর্ম ফি 5% থেকে 15% পর্যন্ত চার্জ করবে। ফ্রিল্যান্সাররা PayPal বা Payoneer-এর মাধ্যমে তিন কার্যদিবসের মধ্যে এবং উচ্চতর প্রোফাইল স্তরের লোকেদের জন্য শীঘ্রই অর্থ প্রদান করে।

Join Now: 99Designs

টাকা আয় করা যায় আরও কিছু ওয়েবসাইট লিষ্ট

Guru

Behance

Dribbble

Servicescape

Designhil

Toptal

Jooble

Freelancer

FlexJobs

ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট গুলোতে কাজ পাওয়া কি সহজ?

আপনি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন এমন কোন কথা আমি বলব না। কিন্তু এটা সত্য যে ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট গুলো থেকে কাজ করে টাকা আয় করাটা খুব সহজ নয়।

এখান আর আগের মত নেই। আগে ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা খুবেই কম ছিল। বর্তমানে লক্ষ লক্ষ ফ্রিল্যান্সার আছে মার্কেটপ্লেস গুলোতে।

আপনি দক্ষ ওয়ার্কার হলে কাজ পাওয়ার সম্ভবনা ৯০% বাকি বিষয় গুলো হল যোগাযোগ দক্ষতা, বায়ারকে কনভেন্স করার দক্ষতা, ধৈর্য্য, এবং প্রোফাইল।

আপনি খুব ভালো কাজ পারেন এটা আপনি জানেন বায়ার কিন্তু জানে না। সুতরাং আপনি ভালো কাজ পারেন এটা জানার এক মাত্র উপায় হল আপনার প্রোফাইল। প্রোফাইল যত বেশি ভালো হবে তত বেশি আপনি বায়ার পাবেন।

আপনার সবকিছুই ভালো কিন্তু বায়ার কি বলছে? উনি কি চাচ্ছে আপনি বুঝতে পারছেন না। বুঝতে না পারলে কাজ পাওয়ার সম্ভবনা নেই। যোগাযোগ করা যায় এবং ইংরেজী বোঝা যায় এমন ইংরেজী দক্ষতা থাকতে হবে।

ওয়েবসাইট থেকে আয় করার ১০টি উপায়

আমি কোন কাজ জানি না, আমি কিভাবে এই ওয়েবসাইট গুলো থেকে আয় করব?

আপনার কোন কাজ জানা নেই। তারমানে আপনি একবারে নতুন এই সেক্টরে। আপনার প্রথম কাজ হবে ফ্রিল্যান্সিং করা যায় এমন বিষয় গুলো উপর কোর্স করা।

নোটঃ ফ্রিল্যান্সিং কোর্স শুরু করার আগে বিষয় নির্বাচন করাটা জরুরি। যেমন সোস্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ফেসবুক মার্কেটিং, ইউটিউব মার্কেটিং, ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং, ইত্যাদি।

আপনি দুই ভাবে কোর্স করতে পারেন।

অনলাইনেঃ অনলাইনে অনেক একাডেমী আছে যারা ফ্রিল্যান্সিং কোর্স বিক্রয় করে থাকে। যেমন 10minuteSchool ফ্রিল্যান্সিং করা যায় এমন বিষয়ের উপর কোর্স করিয়ে থাকে।

itBari

অফলাইনঃ অফলাইন কোর্স করার জন্য আপনি যে এলাকায় বসবাস করে সেখানে কোন ট্রেনিং সেন্টার আছে কি না খোঁজ নিতে পারেন। অথবা ঢাকা শহরে এসে ৩ থেকে ৫ মাস সময় নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং কোর্স করতে পারেন।

কোর্স করার সাথে সাথে আপনাকে অবশ্যই ইংরেজীতে যোগাযোগ করার দক্ষতা অর্জন করতে হবে। সব কিছু সঠিক ভাবে করতে পারলে সহজে ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করতে পারবেন।

ফ্রিল্যান্সিং শেখার জন্য আমার কি কি থাকা দরকার?

  • ল্যাপটপ বা কম্পিউটার
  • ইন্টারনেট কানেকশন
  • অর্থ ( যে অর্থ দিয়ে আপনি কোর্স করা সহ ইন্টারনেট প্যাকেজ ক্রয় করতে পারবেন। )

শেষ কথা

অনেক মানুষ বলবে আপনি অনলাইন থেকে ফ্রি অর্থ ইনকাম করতে পারবেন। আসলে ফ্রি বলতে কোন কিছু হয় না। এই যে আপনি আমর লেখাটি পড়ছেন এটাও কিন্তু একধরনের ইনভেস্টমেন্ট।

আপনি যত বেশি ইনভেস্টমেন্ট করবেন তত বেশি আয় করতে পারবেন। ইনভেন্সমেন্ট বলতে সময় ইনভেস্টের কথা বলছি।

ইন্টারনেটে হাজার হাজার টাকা আয় করার ওয়েবসাইট পাবেন কিন্তু রিয়েল ওয়েবসাইটের সংখ্যা খুবেই কম। কেউ বলবে ভিডিও দেখে টাকা আয়, বিজ্ঞাপন দেখে অর্থ আয়, অ্যাপ থেকে অর্থ ইত্যাদি ইত্যাদি।

বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভাবে ভিন্ন কথা বলে। আপনি সত্যি সত্যি ইন্টারনেট থেকে অর্থ ইনকাম করার চিন্তা করে থাকলে ফ্রিল্যান্সিং, অনলাইন ব্যবসা, এর বাইরে কোন বিকল্প নেই।

ধন্যবাদ ভালো থাকবেন

Click the above button to visit next page

You visited 1/10 pages

This div height required for enabling the sticky sidebar